Copyright

Protected by Copyscape Duplicate Content Software You will copy with risks to penalties and criminal procedures.

Tuesday, July 23, 2019

আত্মীয়-স্বজন

আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আমাদের বাড়িতে কেউ এলে মা তাকে ভাত না খাইয়ে যেতে দিতেন না, সে যত দূরসম্পর্কের আত্মীয়ই হোক না কেন ।  এর মধ্যে তুলনামূলক যাদের অবস্থা বেশি ভালো ছিল না তাদের কিছুটা জোর করে- আরো বেশি বেশি করে খাওয়াতেন ।  আমরা জানতাম যে হয়ত অনেকদিন তার ভালোমন্দ কিছু জোটেনি, তাই ডাল-ভাত-ভাজা-তরকারি-মাছের পর অনেক সময় মা দোকান থেকে রসগোল্লা-পান্তুয়া আনিয়েও  খাওয়াতেন   মাকে তখন আমার খুব ভালো লাগত ।  

এমন একজন দূরসম্পর্কের আত্মীয় ছিল যার ভীষণ চুরির বাতিক ছিল ।  দামি গয়না টয়না নয়, খুচরো টাকা পয়সা বা ইমিটেশন জুয়েলারি কিংবা চুলের ক্লিপ - এসব ছোটখাটো জিনিস তার যাওয়ার পর প্রায়ই হাওয়া হয়ে যেত ।   মা তো একবার তাকে রান্নাঘর থেকে পেঁয়াজ চুরি করতেও দেখেছিলেন ।   আমি মাকে জিজ্ঞেস করতাম যে,’ তুমি ওকে কিছু বলো না কেন?’ মা তখন খুব গম্ভীর হয়ে বোঝাবার চেষ্টা করতেন যে তার প্রয়োজন আমাদের থেকে বেশি ।  আমাকে সান্তনা দেওয়ার জন্য বলতেন যে, ‘আচ্ছা, আগামীবার তুমি একটু চোখে চোখে রেখো!’

কিন্তু এরপরও সে এলে মার ব্যবহারে কোন ত্রুটি থাকত না ।  আমি তখন বুঝতে পারতাম না যে কারোর পরিস্থিতির জন্য সে পুরোপুরি নিজে দায়ী নাও হতে পারে ।  তার অনেক চাহিদা থাকতে পারে যা তার পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়  ।  তখন সে অন্যের জিনিস চুরি করার মতলব করে ।   কিছুটা হয়ত অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায় ।  না হলে আলু-পেঁয়াজ-লেবু এসব না বলে ব্যাগের মধ্যে কে ঢুকায় ? 

যখন কাউকে দেখে মনে হয় যে মনের দিক দিয়ে তারা কত দরিদ্র, কত বিকারগ্রস্ত- তখন ছোটবেলার কথা মনে হয় - হয়ত তার পরিস্থিতির জন্য সে নিজে দায়ী না।  হয়ত সে সারাটা জীবন অন্যের জিনিসের প্রতি লোভ করে কাটিয়ে দেবে।  এখানে ক্ষতি খুব একটা হয়ত আমার হচ্ছেও না।  কিন্তু সবাই জানে কার মনে চোর। সে হয়ত নিজেও জানে এবং মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দেয়।  সকল পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়া সবার পক্ষে সম্ভব না।  কিন্তু নিজেকে বারে বারে লাঞ্চিত করাতে কি সুখ আছে তোমরা বলতে পারো ?

No comments: