Copyright

Protected by Copyscape Duplicate Content Software You will copy with risks to penalties and criminal procedures.

Friday, June 10, 2016

বিশ্বাস

বাবা খ্রীষ্টান, মা হিন্দু। তাই বড় হওয়ার সময় কোন নির্দিষ্ট ধর্মের প্রভাব সে অনুভব করে নি।  স্কুলে ভর্তির সময় এডমিশন ফর্মে লেখা হয়েছিল, 'No religion'  বয়স যখন পনেরো, তখন প্রতিবেশীর ছেলেকে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়তে দেখে। পরিবারের লোকজন 'Faith healing '- এ বিশ্বাসী, তাই অসুস্থ ছেলেকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় নি তারা। কিন্তু বিশ্বাসে রোগ নিরাময় হয় না। সেদিন থেকে নিজেকে নাস্তিক বলে ঘোষণা করে নিজের কাছে।

ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার ডিগ্রী করা কালীন অনুরূপ সংস্কারমুক্ত সহপাঠীদের সঙ্গে পরিচয় হয়।  Indian Rationalist Association (IRA)'র সক্রিয় সদস্য তো ছিলই , তার সাথে Modern Freethinker পত্রিকার সম্পাদনাও শুরু করে। তার লেখা প্রবন্ধ অনুবাদ হয় ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, স্প্যানিশ ও ফিনিশে। 

বন্ধুদের সঙ্গে মিলে অনেক ভন্ড সাধুদের বুজরুকি ফাঁস করে দেয় তাদের ভক্তদের সামনে। 

ইউরোপে লেকচার দিতে ফিনল্যাণ্ড থেকে নিমন্ত্রণ আসে।  যখন বিদেশ যাবার জন্যে গোছগাছ করছে তখন খবর পায় যে মুম্বাই-এর এক অজ্ঞাতনামা চার্চে যিশুর মূর্তির পা চুইয়ে জল পরছে।  দল বল নিয়ে উপস্তিত হয় সেখানে। অনুসন্ধান করে জানতে পারে যে পাশের টয়লেট খারাপ হয়ে গিয়েছে। জল জমছে আর capillary action-এ জলের ধারার সৃষ্টি হচ্ছে।  আর সেই নোংরা জলকে অলৌকিক ভেবে অনেক ভক্তরা বাড়ি নিয়ে যাছে, বউ বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছে। 

এই রহস্য ফাঁসের ব্যাপারে একটা স্থানীয় চ্যানেল সাক্ষাৎকার নিতে চায়।  এক বাবাজি তাকে কোপে ভস্ম করে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন । সাক্ষাৎকার চলাকালীন অনেক মন্ত্র পড়েও যখন বাবাজির কার্যসিদ্ধি হয় না তখন বিফল হয়ে বাবাজি দাবি করেন- এই ব্যাটা শয়তানের দূত। এবং শীঘ্রই নিপাত যাবে। এর বিনাশ সুনিশ্চিত।

কিছু ভাড়া করা গুন্ডা ষ্টুডিওর বাইরে অপেক্ষা করছিল। তারই মধ্যে একজন তার বন্ধু ও সহযোদ্ধাকে ছুরি মেরে জখম করে।

অন্য দিকে Catholic Secular Forum (CSF) তখন Section 295(A) of Indian Penal Code এর অজুহাতে নানা পুলিশ থানায় তার সংস্থার বিরুদ্ধে FIR করছে।  295(A)-এর উৎপত্তি হয়েছিল ১৯২৭ সালে পরাধীন ভারতে। তখন সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা খর্ব করার জন্যে এই নিয়মের সৃষ্টি। যার দরুন যে কোন ব্যক্তিকে পুলিশ বিনা তদন্ত, বিনা প্রমাণে  গ্রেপ্তার করে অনির্দিষ্ট কালের জন্যে হেপাজতে রেখে দিতে পারে।

যুদ্ধের প্রস্তুতি নেবে সেই মানসিকতা তখন তার নেই। সহকর্মীর রক্তাক্ত দেহ আর ষ্টুডিওর বাইরে সেই গুন্ডাগুলোর মুখ মনে পরে যায় বার বার। এরা এত অন্ধ কেন?

বন্ধুদের অনুরোধে সে ফিনল্যাণ্ড একটু আগেই পৌঁছে যায়।  সেখানে কিছু পরিচিত মানবতাবাদীদের আনুকূল্যে ভিসা ও একটা ভাড়া বাড়ি পেতে অসুবিধে হয় না। ভাবে হয়ত ঝামেলা কমলে দেশে ফিরে যাবে।

কিন্তু CSF ভোলার পাত্র নয়।  তারা প্রিতিজ্ঞা করেছে যে প্রসিকিউশন হবেই।  সে যখনি দেশে ফিরুক।

অনেক বছর হয়ে গেছে। মা গত হয়েছেন।  এখনো সে রোজ Skype-এ  IRA'র মিটিং করে।  কোথায় কোন ভন্ড সাধু কিভাবে লোকদের ঠকাচ্ছে তার খবরাখবর নেই।  তাদের জব্দ করার পরিকল্পনা করে। এ রুটিনটা তার জন্যে খুব জরুরি।  যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।

No comments: