কাউন্ট ড্রাকুলার গল্প যদি বাংলায় লেখা হত তাহলে তা কেমন লাগত? অবশ্যই ট্রানসিলভানিয়ার কাউন্ট তখন হয়ে যেতেন বাংলাদেশের কোন বনেদি জমিদার বংশের বংশধর । আর জনাথন হারকার হয়ে যেতেন কোন ছাপোষা নেহাতই ভালোমানুষ বাঙালি ভদ্রলোক ।
ধারাবাহিকভাবে লেখার চেষ্টা করছি একটা অনুপ্রাণিত গল্প । তার প্রথম ও দ্বিতীয় অধ্যায় আমার ব্লগে প্রকাশ করলাম । ভালো লাগলে মন্তব্য করবেন।
প্রথম অধ্যায়
ধারাবাহিকভাবে লেখার চেষ্টা করছি একটা অনুপ্রাণিত গল্প । তার প্রথম ও দ্বিতীয় অধ্যায় আমার ব্লগে প্রকাশ করলাম । ভালো লাগলে মন্তব্য করবেন।
প্রথম অধ্যায়
হাওড়া ছেড়ে তখন রেলগাড়ি শিবনারায়ণপুর স্টেশনে পৌঁছেছে । আমি গাড়ি থেকে নেমে একটা টাঙ্গা খুঁজছি । স্টেশন মাস্টার খুব সুহৃদ ব্যক্তি । বললেন, ‘এই সময় তো টাঙ্গা পাওয়া মুশকিল । আপনি বরং আমার অফিস ঘরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করুন।’ আমি ধন্যবাদ জানিয়ে উনাকে বললাম যে আমি ওয়েটিং রুমেই ভালো সময় কাটাতে পারব । শুধু শুধু উনাকে বিব্রত করা উচিত মনে করলাম না ।
ওয়েটিং রুমের দিকে তখন সবে পা বাড়িয়েছি, উনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তা কোথায় যাওয়া হচ্ছে?’ আমি বললাম ‘জমিদার দেবনারায়ণ বাবুর বাড়িতে ।’সেটা শুনে একটা গ্রাম্য গোছের বয়স্ক মহিলা জোরে জোরে হরি নাম জপতে লাগলেন। আমার ব্যাপারটা এতই অদ্ভুত লাগলো যে আমি কিছুক্ষণ নির্বাক হয়ে চেয়ে রইলাম । স্টেশনমাস্টার আমতা আমতা করে আমাকে বললেন, ‘বয়স্ক লোকদের অনেক কুসংস্কার থাকে, আপনি কিছু মনে করবেন না । ওই বাড়ির খুব বদনাম আছে । অনেকেই তাই জমিদার বাড়ির নাম শুনলে ভয় পেয়ে যায়।’
বয়স্ক স্ত্রীলোকটি কিন্তু কোন দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে সোজা উঠে এসে আমার হাত ধরে ফেললেন । কাকুতি মিনতি করে বলতে লাগলেন যে, ‘খোকা, এত কম বয়সে বেঘোরে প্রাণটা কেন দিতে চাও? আমাদের তো যাওয়ার আর কোন জায়গা নেই কিন্তু তুমি শহর ছেড়ে এই পাড়াগাঁয়ে কেন মরতে এসেছ?’
বার্ধক্য জনিত ভীমরতি ভেবে আমার তার প্রতি খুব দয়া হল, তাই আমি উনাকে ঠেলে সরিয়ে দিতে পারলাম না । আমার ঠাকুমাও শেষ বয়সে নানা অপ্রাসঙ্গিক কথা বলতেন আর সন্ধ্যা হতে না হতেই কোন শব্দ শুনলে চেঁচিয়ে বলতেন, ‘কে যায়? কে যায় ওখানে?’ প্রথম কয়েক বার অনেক খোঁজাখুঁজির পর যখন কাউকে পাওয়া গেল না তখন আমরা বুঝতে পারলাম যে ঠাকুরমার হয়ত স্মৃতি বিভ্রম হচ্ছে এবং শ্রাবণেন্দ্রিয় সংক্রান্ত হ্যালুসিনেশন হচ্ছে । যখন শব্দ হচ্ছে না উনি শুনতে পাচ্ছেন আর যখন সত্যিকারের শব্দ হচ্ছে উনি সেটা শুনতে পারছেন না । এই বৃদ্ধা হয়ত সমস্ত নব আগন্তুককে সাবধান বাণী শুনিয়ে তার কর্তব্য পালন করেন ।সত্যি বলতে কি পথে-ঘাটে তো বিপদের অভাব নেই । বেঘোরে প্রাণ যাওয়াটা আজকাল কিছুই অস্বাভাবিক নয় ।
বৃদ্ধাকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য যখন লোকজন উঠে পড়ে লেগেছে তখন তিনি নিজের হাতের রুদ্রাক্ষের মালাটা আমার হাতে দিয়ে বললেন, ‘ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন বাছা । দুধের বাছা আমার । আহা! কি সুন্দর মুখখানি! যেন রাজপুত্তুর! ’
লজ্জায় আমার মুখ তখন লাল হয়ে গেল ।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর স্টেশন মাস্টার এসে বললেন যে জমিদার বাড়ি থেকে একটা ঘোড়ার গাড়ি এসেছে । সন্ধ্যা তখন ঘনীভূত । বাইরে পরিষ্কার কিছুই দেখা যাচ্ছে না । দূরের আমবাগানের গাছগুলো অতীন্দ্রিয় প্রহরীর মত নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে । যেন কিসের অপেক্ষায় । এখানে কুসংস্কারাচ্ছন্ন হওয়াটা কিছু অস্বাভাবিক নয় । বিজলি বাতি আসে নি । রাস্তাঘাট অন্ধকার । প্রকৃতির প্রভাবই বেশি । ফলে আমাদের পূর্বপুরুষেরা যেসব অলীক ভয় কল্পনা করে জীবন রক্ষা করতেন সেসব কল্পনা এখানে এখনো জীবিত আছে ।